প্রশাসনের উদাসিনতায় চরম ভোগান্তিতে কুড়িগ্রামবাসী


সঠিক তদারকির অভাবে সরকারি গ্রামীণ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবন-যাত্রার নিম্নমান থাকলেও নেই প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিদের নজর। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইজলামারী গ্রামের জিঞ্জিরাম নদীর উপর নির্মিত একটি ব্রিজের দুই পাশে বালু দিয়ে দায়সারা সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়েছে। অপরদিকে ঝুঁকি নিয়ে শিটের প্লেট দিয়ে নামতে বা উঠতে হয়।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি) ২০১৭ সালে প্রায় চার কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় তিন বছর পার হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে ব্রিজের সুফল থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী।
দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজের এমন বেহাল দশা থাকলেও প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অটোরিকশা, ভ্যানসহ মোটরসাইকেল ও সাইকেল আরোহীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, হামাগো সরকার কুটি ট্যাহা দিয়া ব্রিজ দিলেও সেটা দিয়া পার হবার পাইছি না। ব্রিজের দোনো পাশে নাই কোন ঘাডা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হবার নাগে। বন্যার সময় তো আরও কষ্ট হয়। ব্রিজ উঠা-নামা করবার যায়া মেলা মাইনসের ঠ্যাং-হাত ভাংগিছে। পরি যায়া অনেকের রিকশা, অটোরিকশা ভাংছে। এমন ঘটনা কবার গেলে পুতিদিন ঘটে।
পার্শ্ববর্তি যাদুরচর ইউনিয়নেও একই দশা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধিনে কয়েক বছর আগে দুটি ব্রিজ নির্মিত হলেও তাতে সংযোগ সড়ক নেই। মূল রাস্তা থেকে ব্রিজে ওঠার প্রায় ৫-১০ ফুট জায়গায় মাটি না থাকায় চলাচল করা যাচ্ছে না। কর্তিমারী-বড়াইবাড়ি সড়কের কাশিয়াবাড়ি এলাকায় ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।
এখানকার বাসিন্দা ছকমল আলী বলেন, হামরা বাহে কৃষি কাজ করি সংসার চালাই। বাজারত ফসল বেচপার গেলে ৩-৪ কিলোমিটার ঘুরি যাওয়া নাগে। ৪-৫শ টাকা বেশি খরচ হয়। ইয়াতে করি খরচ বেশি পড়ে। তোমরায় কন ক্যামতে হামার গরিব মাইনসের পোষায়। এই ব্রিজটার আস্থা ভাল থাকিল হয়। তাইলে এত্যিকার মাইনসের টাকা বাচি গেইল হয়। অল্প সময়ে বাজার যাওয়া গেইল হয়।
শিল্পি রায় বলেন, এই রাস্তার কারণে বেশি দুর্ভোগ হতে হয় রোগি নিয়ে। এদিক দিয়ে কোন রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা কিছুই চলে না। এমনকি সাইকেল নিয়ে চলাচল করাও যায় না। চিকিৎসার জন্যে হাসপাতাল গেলে ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।
সোবহান মিয়া জানান, সরকারের যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্প চালু রাখছে রাস্তা-ঘাট সংস্কারের জন্যে। কিন্তু সেগুলো মেম্বার-চেয়ারম্যানরা নিজেদের কাজেই ব্যয় করে। এজন্যে ব্রিজ বা কালভার্টের রাস্তার মাটি সরে গেলেও সেগুলো ঠিক করার সময় পায় না তারা। কেননা তারা তো চলাচল করে না। তারা শুধু ভোটের সময় আসবে আর ভোট নিয়ে চলে যাবে; এটাই তাদের কাজ।
এমন দৃশ্য উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বড়ুয়া শ্রীবল্লভ এলকায় একটি ব্রিজ ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ায় এখান বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্রিজের দু’পাশে বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা অটোচালক মকবুল হোসেন বলেন, কয়েক বছর থাকি ব্রিজটি এমন হালি পরি আছে। প্রশাসনের কেউ দেখবারও আসে না। ব্রিজটি ভালো করিও দেয় না। অনেক কষ্ট নিয়ে ৭-৮ কিলোমিটার ঘুরিয়া উপজেলা শহরে যাওয়া লাগে। দিনে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা আয় হলেও এখন ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। রোগি কাঁধে করে বাঁশে সাকো দিয়া পার করা নাগে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন বলেন, উপজেলায় এমন অনেক সড়কে ব্রিজ রয়েছে, যেগুলোর সংযোগ সড়কের করুণ দশা। এমন দুর্ভোগের কথা উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন বরাদ্দের বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেগুলোর সঠিক তদারকি দরকার। এসব কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছেও বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চলতি বছর প্রায় ছয়টি বন্যায় অনেক ব্রিজ ও কালভার্টের সড়কের মাটি ধসে গেছে। কেননা এই অঞ্চলে বালু মাটির পরিমাণ অনেক বেশি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সেগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্যে ঠিকাদারদের কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
ভয়েস টিভি/এমএইচ
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইজলামারী গ্রামের জিঞ্জিরাম নদীর উপর নির্মিত একটি ব্রিজের দুই পাশে বালু দিয়ে দায়সারা সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়েছে। অপরদিকে ঝুঁকি নিয়ে শিটের প্লেট দিয়ে নামতে বা উঠতে হয়।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি) ২০১৭ সালে প্রায় চার কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় তিন বছর পার হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে ব্রিজের সুফল থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী।
দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজের এমন বেহাল দশা থাকলেও প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অটোরিকশা, ভ্যানসহ মোটরসাইকেল ও সাইকেল আরোহীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, হামাগো সরকার কুটি ট্যাহা দিয়া ব্রিজ দিলেও সেটা দিয়া পার হবার পাইছি না। ব্রিজের দোনো পাশে নাই কোন ঘাডা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হবার নাগে। বন্যার সময় তো আরও কষ্ট হয়। ব্রিজ উঠা-নামা করবার যায়া মেলা মাইনসের ঠ্যাং-হাত ভাংগিছে। পরি যায়া অনেকের রিকশা, অটোরিকশা ভাংছে। এমন ঘটনা কবার গেলে পুতিদিন ঘটে।
পার্শ্ববর্তি যাদুরচর ইউনিয়নেও একই দশা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধিনে কয়েক বছর আগে দুটি ব্রিজ নির্মিত হলেও তাতে সংযোগ সড়ক নেই। মূল রাস্তা থেকে ব্রিজে ওঠার প্রায় ৫-১০ ফুট জায়গায় মাটি না থাকায় চলাচল করা যাচ্ছে না। কর্তিমারী-বড়াইবাড়ি সড়কের কাশিয়াবাড়ি এলাকায় ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।
এখানকার বাসিন্দা ছকমল আলী বলেন, হামরা বাহে কৃষি কাজ করি সংসার চালাই। বাজারত ফসল বেচপার গেলে ৩-৪ কিলোমিটার ঘুরি যাওয়া নাগে। ৪-৫শ টাকা বেশি খরচ হয়। ইয়াতে করি খরচ বেশি পড়ে। তোমরায় কন ক্যামতে হামার গরিব মাইনসের পোষায়। এই ব্রিজটার আস্থা ভাল থাকিল হয়। তাইলে এত্যিকার মাইনসের টাকা বাচি গেইল হয়। অল্প সময়ে বাজার যাওয়া গেইল হয়।
শিল্পি রায় বলেন, এই রাস্তার কারণে বেশি দুর্ভোগ হতে হয় রোগি নিয়ে। এদিক দিয়ে কোন রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা কিছুই চলে না। এমনকি সাইকেল নিয়ে চলাচল করাও যায় না। চিকিৎসার জন্যে হাসপাতাল গেলে ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।
সোবহান মিয়া জানান, সরকারের যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্প চালু রাখছে রাস্তা-ঘাট সংস্কারের জন্যে। কিন্তু সেগুলো মেম্বার-চেয়ারম্যানরা নিজেদের কাজেই ব্যয় করে। এজন্যে ব্রিজ বা কালভার্টের রাস্তার মাটি সরে গেলেও সেগুলো ঠিক করার সময় পায় না তারা। কেননা তারা তো চলাচল করে না। তারা শুধু ভোটের সময় আসবে আর ভোট নিয়ে চলে যাবে; এটাই তাদের কাজ।

এমন দৃশ্য উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বড়ুয়া শ্রীবল্লভ এলকায় একটি ব্রিজ ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ায় এখান বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্রিজের দু’পাশে বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা অটোচালক মকবুল হোসেন বলেন, কয়েক বছর থাকি ব্রিজটি এমন হালি পরি আছে। প্রশাসনের কেউ দেখবারও আসে না। ব্রিজটি ভালো করিও দেয় না। অনেক কষ্ট নিয়ে ৭-৮ কিলোমিটার ঘুরিয়া উপজেলা শহরে যাওয়া লাগে। দিনে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা আয় হলেও এখন ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। রোগি কাঁধে করে বাঁশে সাকো দিয়া পার করা নাগে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন বলেন, উপজেলায় এমন অনেক সড়কে ব্রিজ রয়েছে, যেগুলোর সংযোগ সড়কের করুণ দশা। এমন দুর্ভোগের কথা উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন বরাদ্দের বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেগুলোর সঠিক তদারকি দরকার। এসব কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছেও বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চলতি বছর প্রায় ছয়টি বন্যায় অনেক ব্রিজ ও কালভার্টের সড়কের মাটি ধসে গেছে। কেননা এই অঞ্চলে বালু মাটির পরিমাণ অনেক বেশি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সেগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্যে ঠিকাদারদের কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
ভয়েস টিভি/এমএইচ
সর্বশেষ সংবাদ