ভারত থেকে এসে গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে মারা গেল নীলগাইটি

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে বিলুপ্তপ্রায় একটি নীলগাই মারা গেছে। ২ জুলাই শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের মুক্তারবস্তি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান রাণীশংকৈল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মদন কুমার রায়।

এলাকাবাসীর বরাতে রানীশংকৈল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মদন কুমার রায় বলেন, ধর্মগড় সীমান্ত এলাকার কাঁটাতার পেরিয়ে নীলগাইটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কয়েকদিন ধরে নীলগাইটি রাণীশংকৈলের মুক্তারবস্তি এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলো।

শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে গ্রামবাসীর নজরে আসে বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটি। পরে গ্রামবাসী ওই নীলগাইটিকে ধরার চেষ্টা করে। গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে এক পর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে নীলগাইটি স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের নির্মানাধীন বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নেয়। এরপর লোকজন বাড়ির চারদিক ঘিরে ফেললে নীলগাইটি ঘরের জানলা দিয়ে লাফিয়ে পালাতে গেলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁও প্রাণিসম্পদ বিভাগের ওই এলাকার লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) আকবর আলী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনিসহ গ্রামের লোকজন নীলগাইটিকে সুস্থ করে তুলতে বাতাস ও মাথায় পানি দিতে শুরু করে। এরইমধ্যে নীলগাইটি মারা যায়।

মারা যাওয়া নীলগাইটি ধূসর রঙের পুরুষ প্রজাতির। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি হার্ট অ্যাটাক করে নীলগাইটির মৃত্যু হয়েছে।

মদন কুমার রায় বলেন, নীলগাই বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় একটি বন্য প্রাণী। গাই হিসেবে পরিচিত হলেও নীলগাইটি কখনোই গরুশ্রেণির নয়; বরং এটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হরিণবিশেষ প্রাণী। শত বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নীলগাই দেখা যেত। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মাঠে-ঘাটে একসময় নীলগাইয়ের দেখা মিলত। এখন আর দেখা যায় না।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শৌলা দোগাছি এলাকায় জবাই করার সময় প্রামবাসীর হাত থেকে একটি নীলগাই উদ্ধার হয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের যদুয়ার গ্রামে আরকটি নীলগাই ধরা পড়েছিল।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাণীশংকৈলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রীতম সাহা বলেন, গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল নীলগাইটি। পরে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালাতে গেলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, এরপর নীলগাইটি মারা যায়। নীলগাইটিকে জীবিত উদ্ধার করা গেলে ভালো লাগত। কিন্তু আমরা বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারিনি।

পরে ঠাকুরগাঁও বনবিভাগের কর্মকর্তারে সঙ্গে কথা বলে আজ শুক্রবার বিকেলে নীলগাইটিকে ওই গ্রামে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।

ভয়েস টিভি/এসএফ