যে কারণে লতা মঙ্গেশকর বিয়ে করেননি


উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর এই জীবনে বহু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কিন্তু নিজেকে কারও ভালোবাসার কাছে সোপর্দ করে সংসার করেননি। করেননি বিয়ে। আজীবন ছিলেন চিরকুমারী। কিন্তু কেন বিয়ে করেননি এই প্রশ্নও ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর কাছে।
নিজের বিয়ে না করা নিয়ে জবাবও দিয়েছেন লতা। এক সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মনের ঝাঁপি খুলেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘একমাত্র আমার মা বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করতেন, একসময় তিনিও হাল ছেড়ে দেন। আমার কাছে পরিবার বিয়ের চেয়ে বেশি জরুরি ছিল। কিন্তু এমনটা অস্বীকার করবো না যে আমাকে কোনও দিন একাকিত্ব ঘিরে ধরেনি, তাহলে তো আমি মানুষই হতাম না। বিবাহিত হোন কিংবা সিঙ্গেল, একাকিত্ব সবার জীবনে আছে। কখনও কখনও এই একাকিত্ব ক্ষতিকারক হয়। তবে বলবো, আমি খুব সৌভাগ্যবান যে ভালোবাসার মানুষরা আমার আশপাশে সবসময় থেকেছে।’
লতা মঙ্গেশকর কোনও দিন প্রেমে পড়েননি? এই প্রশ্নও এসেছিল। লতা মৃদু হেসে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, পড়েছে তো, তবে শুধু নিজের কাজের সঙ্গে। আর আমি ভালোবেসেছি আমার আপনজনদের, পরিবারকে, আর কাউকে নয়।’
আরও পড়ুন: চলে গেলেন কিংবদন্তি গায়িকা লতা মঙ্গেশকর
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে গান গেয়ে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন লতা
তবে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, গুঞ্জন ছিল লতা মঙ্গেশকর একসময় কাউকে ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু তার সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। প্রেমে সফল হননি বলেই কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধাও হয়নি তার। এমনও শোনা যায়, রাজস্থানের (তৎকালীন রাজপুতনা) দুঙ্গরপুরের রাজ ঘরানার মহারাজ রাজ সিং-এর প্রেমে পড়েছিলেন লতা। যিনি সম্পর্কে লতার বড়ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
জীবনে প্রেম এসেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তা পরিণতি পায়নি। রাজ ঘরানার ছেলে রাজ সিং নাকি বাবা-মাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, কোনো সাধারণ ঘরের মেয়েকে তিনি রাজবংশের বউ করে আনবেন না। সেই প্রতিজ্ঞা বজায় রেখেছিলেন রাজ সিং। তিনি কখনো বিয়েই করেন নি। লতার থেকে ৬ বছরের বড় রাজ সিং আদর করে লতাকে মিট্টু বলে ডাকতেন আর পকেটে সবসময় একটি রেকর্ডার নিয়ে ঘুরতেন। সেই রেকর্ডারের মধ্যে রেকর্ড করা থাকতো লতা মঙ্গেশকরের বিখ্যাত কিছু গান। ২০০৯ সালে প্রয়াত হন রাজ সিং। তবে রাজ সিং ছাড়া লতার দীর্ঘ জীবনে কখনো আর কারও সঙ্গে তার নাম জড়ায়নি।
অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ৩৫টিরও বেশি ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছিলেন লতা। তবে কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে পারিবারিক নাম হয়ে উঠেছিলেন। ৭৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লতা মঙ্গেশকর তার জাদুকরি কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।
লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্ডোরে শাস্ত্রীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব ও থিয়েটার শিল্পী পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ও শেবান্তির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান। তার আগে অবশ্য বাবার হাত ধরেই অভিনয় এবং গান শিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। ১৩-১৪ বছর বয়সেই প্রথম বার সিনেমায় গান গাওয়া মারাঠি ছবিতে। মুম্বাই যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি ছবিতে গান ‘মজবুর’ ছবিতে।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতাই ছিলেন সবথেকে বড়। চল্লিশের দশকে গায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তারপর পঞ্চাশ, ষাট-সত্তরেরর দশক থেকে নব্বইয়ের দশকেও চুটিয়ে প্লে-ব্যাক করেন লতা মঙ্গেশকর।
৬ ফেব্রুয়ারি রোববার মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে উপমহাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
ভয়েসটিভি/আরকে