যে ভাষার মানুষ মাত্র ছয় জন


পৃথিবীতে কোনো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হল ভাষা। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্যা ভাষাভাষীর জনগোষ্ঠী। কিন্তু কালের বিবর্তনে পৃথিবী থেকে অনেক ভাষা হারিয়েছে এবং হারাচ্ছে। হারানোর তালিকায় থাকা তেমনি একটি ভাষা ‘রেংমিটচ্য’। নারী এবং পুরুষ মিলিয়ে এ ভাষার লোক আছে মাত্র ছয় জন। বিস্ময়ে ব্যাপার হল এই ছয় জনের মৃত্যু হলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে এ ভাষা। তারও একটি বড় কারণ হল তাদের পরবর্তী নতুন প্রজন্ম নিজ মাতৃ ভাষা রেংমিটচ্য আর ব্যবহার করছে না।
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় এই ছয় জনের বসবাস। এই ছয় জনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী। ছয়জনের মধ্যে চারজন আলীকদম ও দুজন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম ম্রো জনগোষ্ঠীর পাড়ায় বসবাস করেন।
আলীকদমে বসবাসকারী হলেন ৬৯ বছরের নারী কুনরাও, ৭৫ বছরের মাংপুন, ৪৫ বছরের সিংরা ক্রাংসিপাড়ায় এবং ৫৮ বছরের থোয়াইংলক মেনসিংপাড়ায় থাকেন। আর ৭২ বছরের রেংপুন থাকেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ওয়াইবতপাড়ায় ও ৬০ বছরের মাংওয়াই একই উপজেলায় কাইংওয়াইপাড়ায় বসবাস করছেন।
ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় তারা বসবাস করায় নিজের মাতৃভাষা ব্যবহার করার সুযোগ পান না। এজন্য ম্রো ভাষাই তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
রেংমিটচ্য ভাষার এই ছয় জন জানান, ৫০ ও ৬০–এর দশকে আলীকদমে চার-পাঁচটি পাড়ায় শতাধিক রেংমিটচ্যভাষী পরিবার ছিল। তবে তাদের আদি বসস্থান প্রাচীন ক্রাংসিপাড়ায় এবং তা ৩০০ বছরের পুরনো। এলাকাটি আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ১৭-১৮ কিলোমিটার দূরে তৈনখালের উপত্যকায় অবস্থিত।
এ এলাকা থেকে জুমচাষের জমির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী এলাকায় রেংমিটচ্যরা সমগোত্রীয় ম্রোদের সঙ্গে মিলেমিশে আরও তিন-চারটি পাড়া গড়ে তোলেন। তখন থেকে তারা সংখ্যায় বেশি একই সংস্কৃতির ম্রোদের সঙ্গে ধীরে ধীরে মিশে যেতে থাকেন এবং রেংমিটচ্য ভাষাও হারিয়ে যেতে থাকে।
ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি গ্রন্থের লেখক, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য সিংয়ং ম্রো বলেছেন, ২০১৩ সালে ৩৬ জনকে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এসে পাওয়া গেল মাত্র ছয় জনকে। মানুষ প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা শেখে পরিবারে। কিন্তু রেংমিটচ্য ভাষা জানা কয়েকজন থাকলেও এই ভাষাভাষীর কোনো পরিবার নেই। এ কারণে ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা রেংমিটচ্য শেখার কোনো পরিবেশও নেই। তারা সবাই ম্রো ভাষা শিখছে ও কথা বলছে। জীবিত বয়স্কদের মৃত্যু হলে এ ভাষায় কথা বলার আর কেউ থাকবে না।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. শাফীউল মুজ নবীন বলেন, গবেষণা চালিয়ে সমতলে ও পাহাড়ে ৪১টি ভাষা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪টি বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিপন্ন ভাষার মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামের রেংমিটচ্য ভাষা, সমতলের পাত্র জনগোষ্ঠীর লালেং ভাষা গুরুতর সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু লালেং ভাষা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রেংমিটচ্য ভাষা রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।
ভয়েসটিভি/এমএম
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় এই ছয় জনের বসবাস। এই ছয় জনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী। ছয়জনের মধ্যে চারজন আলীকদম ও দুজন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম ম্রো জনগোষ্ঠীর পাড়ায় বসবাস করেন।
আলীকদমে বসবাসকারী হলেন ৬৯ বছরের নারী কুনরাও, ৭৫ বছরের মাংপুন, ৪৫ বছরের সিংরা ক্রাংসিপাড়ায় এবং ৫৮ বছরের থোয়াইংলক মেনসিংপাড়ায় থাকেন। আর ৭২ বছরের রেংপুন থাকেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ওয়াইবতপাড়ায় ও ৬০ বছরের মাংওয়াই একই উপজেলায় কাইংওয়াইপাড়ায় বসবাস করছেন।
ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় তারা বসবাস করায় নিজের মাতৃভাষা ব্যবহার করার সুযোগ পান না। এজন্য ম্রো ভাষাই তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
রেংমিটচ্য ভাষার এই ছয় জন জানান, ৫০ ও ৬০–এর দশকে আলীকদমে চার-পাঁচটি পাড়ায় শতাধিক রেংমিটচ্যভাষী পরিবার ছিল। তবে তাদের আদি বসস্থান প্রাচীন ক্রাংসিপাড়ায় এবং তা ৩০০ বছরের পুরনো। এলাকাটি আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ১৭-১৮ কিলোমিটার দূরে তৈনখালের উপত্যকায় অবস্থিত।
এ এলাকা থেকে জুমচাষের জমির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী এলাকায় রেংমিটচ্যরা সমগোত্রীয় ম্রোদের সঙ্গে মিলেমিশে আরও তিন-চারটি পাড়া গড়ে তোলেন। তখন থেকে তারা সংখ্যায় বেশি একই সংস্কৃতির ম্রোদের সঙ্গে ধীরে ধীরে মিশে যেতে থাকেন এবং রেংমিটচ্য ভাষাও হারিয়ে যেতে থাকে।
ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি গ্রন্থের লেখক, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য সিংয়ং ম্রো বলেছেন, ২০১৩ সালে ৩৬ জনকে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এসে পাওয়া গেল মাত্র ছয় জনকে। মানুষ প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা শেখে পরিবারে। কিন্তু রেংমিটচ্য ভাষা জানা কয়েকজন থাকলেও এই ভাষাভাষীর কোনো পরিবার নেই। এ কারণে ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা রেংমিটচ্য শেখার কোনো পরিবেশও নেই। তারা সবাই ম্রো ভাষা শিখছে ও কথা বলছে। জীবিত বয়স্কদের মৃত্যু হলে এ ভাষায় কথা বলার আর কেউ থাকবে না।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. শাফীউল মুজ নবীন বলেন, গবেষণা চালিয়ে সমতলে ও পাহাড়ে ৪১টি ভাষা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪টি বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিপন্ন ভাষার মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামের রেংমিটচ্য ভাষা, সমতলের পাত্র জনগোষ্ঠীর লালেং ভাষা গুরুতর সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু লালেং ভাষা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রেংমিটচ্য ভাষা রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।
ভয়েসটিভি/এমএম
সর্বশেষ সংবাদ