শেখ জামালের ৬৮তম জন্মদিন আজ


সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত অফিসার, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৬৮তম জন্মদিন আজ। ১৯৫৪ সালের এদিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে সপরিবারে জাতির পিতার সঙ্গে শহীদ হন তিনিও।
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ২ এপ্রিল মন্ত্রিসভা গঠন করে এবং ১৪ মে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। দুর্ভাগ্য হলো ৩০ মে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। সাধারণ মানুষকে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির আলোয় আনতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
পরিবার-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে একজন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে দিনের পর দিন কারাগারে কাটানো যে কষ্টের তা ভুক্তভোগী মুজিব উপলব্ধি করেছেন তিলতিল করে। ঠিক এ রকম অনেক দিন গেছে যখন শিশু শেখ জামালকে নিয়ে বঙ্গমাতা তাঁর দুঃসময় অতিবাহিত করেছেন। তবে এর পরই সকলে মিলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।
শেখ জামাল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা শেখ জামাল গিটার শেখার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন এবং একজন ভালো ক্রিকেটারও ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে অধিকাংশ সময় জেলে থাকতে হয়েছিল বলে বঙ্গমাতা এবং বড় বোন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- শেখ জামালকে ছোটবেলা থেকে দিকনির্দেশনা দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করেই তাঁর রাজনৈতিক চেতনা গড়ে উঠেছিল।
বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আত্মগোপন করেন শেখ জামাল। পরবর্তীতে পাকিস্তানিদের হাতে সকলে গ্রেফতার হলে ধানমন্ডি ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে কিংবা পালানোর সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়লে তাঁর মৃত্যু ছিলো অনিবার্য।
কিন্তু তিনি ছিলেন পিতার মতো নির্ভীক ও দেশপ্রেমের মূর্তপ্রতীক। তিনি পাকিস্তানি পাহারাদারদের চোখে ফাঁকি দিয়ে ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতের আগরতলা চলে যান। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে পৌঁছান উত্তর প্রদেশের কালশীতে। মুজিব বাহিনীর ৮০ জন নির্বাচিত তরুণের সঙ্গে ২১ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
শেখ জামাল ছিলেন ৯ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা। রাইফেল কাঁধে অসীম সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি শত্রুর মোকাবিলা করে দেশকে মুক্ত করেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৮ ডিসেম্বর ফিরে আসেন বঙ্গমাতা ও শেখ হাসিনাসহ ভাইবোনদের কাছে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দূর হয়। ওই দিন বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভায়ও যোগ দেন তিনি। তারপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে পিতার কাছে সামরিক পোশাকেই অন্য দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ রাসেলসহ উপস্থিত ছিলেন তিনি।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গরূপে গঠিত হলে শেখ জামাল সেনাবাহিনীর লংকোর্চের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার হন। লন্ডনে লেখাপড়ার পরে তিনি লেফটেন্যান্ট হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সেই সেনাবাহিনীরই একটি অংশের হাতে- যারা মনে-প্রাণে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট গোষ্ঠী ছিলো। এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের রক্তপাত যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করেছিল, তাদের সেনা আইনে বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সে সময়ের সেনাপ্রধান। যখন হত্যার শিকার হন তখন শেখ জামালের পরিচয় দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে গেছে।
শহীদ শেখ জামাল শুয়ে আছেন বনানী কবরস্থানে, তার পাশেই আছেন স্ত্রী রোজী জামাল। যিনি ওই রাতেই শহীদ হয়েছিলেন সকলের সঙ্গে। তাদের বিয়ে হয়েছিল আগের মাসে ১৭ জুলাই। ঘাতকের বুলেট তাঁদের স্মৃতিকে বিলোপ করতে পারেনি বরং মৃত্যু অমর করেছে তাঁদের অবদানকে। শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সন্তান হিসেবে এদেশে সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ভয়েসটিভি/একে/এএস
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ২ এপ্রিল মন্ত্রিসভা গঠন করে এবং ১৪ মে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। দুর্ভাগ্য হলো ৩০ মে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। সাধারণ মানুষকে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির আলোয় আনতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
পরিবার-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে একজন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে দিনের পর দিন কারাগারে কাটানো যে কষ্টের তা ভুক্তভোগী মুজিব উপলব্ধি করেছেন তিলতিল করে। ঠিক এ রকম অনেক দিন গেছে যখন শিশু শেখ জামালকে নিয়ে বঙ্গমাতা তাঁর দুঃসময় অতিবাহিত করেছেন। তবে এর পরই সকলে মিলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।
শেখ জামাল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা শেখ জামাল গিটার শেখার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন এবং একজন ভালো ক্রিকেটারও ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে অধিকাংশ সময় জেলে থাকতে হয়েছিল বলে বঙ্গমাতা এবং বড় বোন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- শেখ জামালকে ছোটবেলা থেকে দিকনির্দেশনা দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করেই তাঁর রাজনৈতিক চেতনা গড়ে উঠেছিল।
বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আত্মগোপন করেন শেখ জামাল। পরবর্তীতে পাকিস্তানিদের হাতে সকলে গ্রেফতার হলে ধানমন্ডি ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে কিংবা পালানোর সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়লে তাঁর মৃত্যু ছিলো অনিবার্য।
কিন্তু তিনি ছিলেন পিতার মতো নির্ভীক ও দেশপ্রেমের মূর্তপ্রতীক। তিনি পাকিস্তানি পাহারাদারদের চোখে ফাঁকি দিয়ে ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতের আগরতলা চলে যান। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে পৌঁছান উত্তর প্রদেশের কালশীতে। মুজিব বাহিনীর ৮০ জন নির্বাচিত তরুণের সঙ্গে ২১ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
শেখ জামাল ছিলেন ৯ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা। রাইফেল কাঁধে অসীম সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি শত্রুর মোকাবিলা করে দেশকে মুক্ত করেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৮ ডিসেম্বর ফিরে আসেন বঙ্গমাতা ও শেখ হাসিনাসহ ভাইবোনদের কাছে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দূর হয়। ওই দিন বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভায়ও যোগ দেন তিনি। তারপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে পিতার কাছে সামরিক পোশাকেই অন্য দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ রাসেলসহ উপস্থিত ছিলেন তিনি।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গরূপে গঠিত হলে শেখ জামাল সেনাবাহিনীর লংকোর্চের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার হন। লন্ডনে লেখাপড়ার পরে তিনি লেফটেন্যান্ট হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সেই সেনাবাহিনীরই একটি অংশের হাতে- যারা মনে-প্রাণে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট গোষ্ঠী ছিলো। এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের রক্তপাত যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করেছিল, তাদের সেনা আইনে বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সে সময়ের সেনাপ্রধান। যখন হত্যার শিকার হন তখন শেখ জামালের পরিচয় দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে গেছে।
শহীদ শেখ জামাল শুয়ে আছেন বনানী কবরস্থানে, তার পাশেই আছেন স্ত্রী রোজী জামাল। যিনি ওই রাতেই শহীদ হয়েছিলেন সকলের সঙ্গে। তাদের বিয়ে হয়েছিল আগের মাসে ১৭ জুলাই। ঘাতকের বুলেট তাঁদের স্মৃতিকে বিলোপ করতে পারেনি বরং মৃত্যু অমর করেছে তাঁদের অবদানকে। শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সন্তান হিসেবে এদেশে সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ভয়েসটিভি/একে/এএস
সর্বশেষ সংবাদ